হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার ২০১৭

গত বছর তিনটা জিনিস আমি শিখেছি-
১. যে জিনিসের উপর আমার কোন অধিকার নাই সেটার জন্য কষ্ট পাওয়ার কোন মানে নেই, রশি যখন হাত কাটতে শুরু করে তখন তা ছেড়ে দেওয়াই ভালো

২. যে কাজ আমাকে দিয়ে কখনও সম্ভব না সেটা করতে না পারার জন্য আফসোস করাটা বোকামি!

৩. ভয়ংকরতম বিপদটাও একটা সময় কেটে যায়ই- প্রয়োজন শুধু মাথা ঠান্ডা করে নিঁখুত ভাবে প্ল্যান করে বিপদের মুখোমুখি হওয়া!

আমার এই ছোট্ট জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় বছর ছিলো ২০১৬- সারা জীবন মনে রাখার মত দুটো ঘটনা ঘটেছে এ বছর- কাউকে ভালোবাসা বলতে আসলে কি বুঝায়, টানা দুটো বছর ফেসবুকে ব্লগে ভালোবাসা নিয়ে কাবজাব অনেক কিছু লেখার পর এই প্রথম আমি অনুভব করতে পেরেছি। প্রেম, সম্পর্ক নিয়ে আমার যত আজগুবি ধারণা ছিলো সব পালটে গেছে। ফেসবুকে যদিও আমি আগের মত লুতুপুতু হাবিজাবিই লিখছি, ভেতরের মানুষটা পালটে গেছি একদমই… আমি এখন জানি ইগো হলো সুখী হবার সবচেয়ে বড় শত্রু। আমি জানি কারো প্রায়োরিটি লিস্টের এক নম্বরে থাকতে চাইলে তাকেও প্রায়োরিটি লিস্টের এক নম্বরে রাখতে হয়। নিজের কম্ফোর্ট জোন ভেংগে নিজেকে ভেংগে চুড়ে নতুন করে গড়তে হয়- এই পৃথিবী ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপের লোকদের জন্য নয়। আমি খুব অল্প করে হলেও বুঝতে শিখছি একটা মেয়ের ব্রেইন কি ভয়ংকর জটিল অথচ নিঁখুত লজিকাল হতে পারে ভালোবাসার ক্ষেত্রে। শিখছি। মুগ্ধ হচ্ছি। বারবার কারো লজিকের কাছে পরাজিত হতে ভালো লাগছে। সব যন্ত্রণা, হতাশা, কষ্ট, ফ্রাস্ট্রেশনকে পাশে রেখেও সুখী হওয়া যায়- শুধু নিজে চাইলে- এই অদ্ভুত সত্যটা এবছর আমি আবিষ্কার করেছি!

আরেকটা বড় ঘটনা ঘটেছে এবছরের মাঝামাঝি- আমি ভয়ংকর এক ধাক্কা খেয়ে আবিষ্কার করলাম- কারো সাজানো গোছানো জীবনটা এক মূহুর্তে কল্পনাতীত দুঃস্বপ্ন হয়ে যেতে পারে। কারো সাথে কোন দিন অন্যায় না করা, কারো সাতে/পাঁচে না থাকা মানুষদের সাথে পৃথিবির সবচেয়ে নিষ্ঠুর অন্যায় গুলো করা হয়। “কেন আমার সাথে এরকম হলো”- এই প্রশ্নের কোন জবাব নেই। বরং কিভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় সেটা খুব ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে হয়। আমি আবিষ্কার করেছি- ভয়ংকর ক্রাইসিসে আমার মাথা অসম্ভব ঠান্ডা হয়ে যায়- এত এত থ্রিলার বই পড়া আর মুভি দেখা এ বছর কাজে দিয়েছে! আরেক টা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস শিখেছি- বিপদ যতই বিশাল হোক না কেন- ফ্যামিলির সবাই একসাথে থাকলে সেটা কোন না কোন ভাবে পার করা যায়। উপকারী আত্মীয় স্বজন খোদার দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার গুলোর একটি- এটাও উপলব্ধি হলো। আর দিশেহারা না হয়ে ধৈর্য ধরা লাগে- অবশ্যই কষ্টের পর স্বস্তি রয়েছে!

২০১৭ কেমন যাবে জানা নেই। জানার খুব একটা আগ্রহও পাচ্ছি না। বয়স বাড়লে না, আসলে মানুষ ম্যাচুরড হয় ধাক্কা খেয়ে খেয়ে- আর সম্ভবত ম্যাচুরিটি যত বাড়ে তত নির্মোহ হতে থাকে- যা হয় হোক, আমি সার্ভাইভ করতে পারবো! ছোট ছোট কিছু পার্সোনাল চিন্তা মাথায় আছে। সেসব নিয়ে খাটাখাটি করতে গেলে ভার্চুয়াল লাইফ সহ কিছু ব্যপার স্যাক্রিফাইস করা লাগতে পারে। কিন্তু নতুন বছরে সবচেয়ে বড় চাওয়া- আব্বা আম্মা এই দুজনের সম্পূর্ণ সুস্থতা। একটা বয়সের পর মানুষের অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। আর বাবা মা এঁদের কেউ একজন সুস্থ না থাকলেই বাকি সব কিছু অর্থহীন লাগে। নতুন বছরে আমাদের সবার বাবা মা সুস্থ থাকুন- আপাতত এর চেয়ে বড় কোন উইশ মাথায় আসছে না।

বিঃদ্রঃ কেও একজন আমাকে গিজ্ঞেস করেছিল তোমার ২০১৬ টা কেমন গেল! আজ সকাল তেকে একটু ফ্রি ছিলাম, তাই আমি মনেকরি তার উত্তর দিতে সক্ষম হলাম।

Leave a comment